স্নোবল


 








স্নোবল..
আমি যখন প্রথম চোখ মেলে তাকালাম , চারপাশে অন্ধকার । আমার বুকের নিচে ছপছপ পানি। ঘন কালো বৃষ্টির মাঝে, আমাকে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হলো । আমি বুঝতে পারছিলাম আমাকে একটা কিছুর মাঝে ঢুকিয়ে নেয়া হচ্ছে । সম্ভবত একটা শপিং ব্যাগ ছিল। মা তখন বাসায় ছিলনা। আমার দুটো ছোট্ট ভাইবোন ঘুমিয়ে ছিল। । বুঝতে পারছিলামনা কি হতে চলেছে আমার সাথে। থেকে থেকে বাজ পরছে। সাই সাই করে চলে যাওয়া গাড়ির চাকায় রাস্তার পানি আমাকে ভিজিয়ে একাকার করে দিচ্ছে। এতটুকু প্রাণ আমার! আমি কী তাই নিতে পারি? কিন্তু নিতে হয়েছিল সেদিন আমাকে। আমি থরথর করে কাপছিলাম। বোঝার চেষ্টা করছিলাম আমার জন্য কি বা কি কি অপেক্ষা করছে। হঠাৎ অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলাম। একটি জিঞ্জার কালার হুলো বিড়াল আমাকে দেখে থামলো। মনে হলো ডিনার হিসেবে আমি তার পছন্দ হইনি। তাই সময় নষ্ট না করে চলে গেল। কিন্তু আমি ভয় পাইনি। বরং বুঝতে চেষ্টা করছিলাম।
রবীন্দ্র সরোবরে এক মামার পাস্তার দোকান আছে। কোনভাবে সেদিন একটু পাস্তা চুরি করে খেয়েছিলাম। এখন আমি কিছুটা বড় হয়েছি। আপাতত ধানমন্ডি ৮ নম্বরে থাকি। দুদিন কোন ভালো খাবার খাইনি। আর একটু হলে তো মরতেই বসেছিলাম। সেই পাস্তা মামা আমাকে তার খুন্তি ছুড়ে মেরেছিল। পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম কিন্তু পাস্তাটা ছিল সেই!! এখনো মুখে লেগে আছে।
জীবনটা অতটাও সহজ ছিল না। এ শহরের ইঁদুর গুলো ভীষণ বেয়াদব আর বেপরোয়া। ধাড়ি ইঁদুর গুলো তো শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকতো কখনো আমাকে বারবিকিউ বানাবে। ভাগ্য ভালো যে, আমার প্রতিবেশী ছোট্ট একটি মেয়ে মোজা কেটে গেঞ্জি বানিয়ে আমাকে পড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল। মেয়েটির সাথে দেখা হচ্ছেনা। সম্ভবত ওর স্কুল বন্ধ। না হলে বলতাম গেঞ্জিটা ওয়াশ করে দিতে।
সেদিনের খুন্তি দিয়ে মার খাওয়ার ব্যাথাটা এখনো আছে। তবুও সেদিন পার্কে অনেক খেলেছি। একটা ঘাস ফরিং আর আমি। পাস্তা মামার দোকান আজ বন্ধ। না হলে আজও একটা চান্স নিতাম। খেলা শেষে একটু ঘুমিয়েছিলাম। কিন্তু ঘুমানোর উপায় আছে! এক হারামজাদা অকারণেই এক লাথি মেরে ঘুমটা দিল শেষ করে।
আজ আমার মায়ের কথা মনে পরছে। মনে পরছে আমার ভাইবোনের কথা। হয়তো আর কোনদিনও ওদের সাথে দেখা হবেনা। আমি, স্নোবল। সেদিনের সেই ঝরের রাতের ছোট্ট বিড়াল। এ শহরের মানুষের লাথি, দাবড়ানি আর পাস্তা খেয়ে ক্রমশই বড় হয়ে উঠছি। আমি সবকিছু উপেক্ষা করে বাঁচতে শিখেছি।
আমার কোন আক্ষেপ নেই মানুষের ভালোবাসা ছাড়া।
আমি তো সব হারিয়েছি, এরপরও কি আমি তোমাদের সাথে বাঁচতে পারিনা?
এই সুন্দর পৃথিবী কি আমার জন্য এতটাই ছোট?
------------------------
২৮ অক্টোবর ২০২৪

No comments:

Post a Comment



আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ নীল মানবের কাব্য I ১০ ফেব্রুয়ারির পর পাওয়া যাবে নবান্ন প্রকাশনীর স্টলে I অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ নবান্ন প্রকাশনী।। স্টল নং ৪৮৪--৪৮৫

দিয়াশলাই আবিস্কারক জন ওয়াকারের ২৪২তম জন্মবার্ষিকী ২৯ মে ২০২৩। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একজন দিয়াশলাই সংগ্রাহক হিসেবে আমার ছোট্ট প্রয়াস -জন ওয়াকার ও দিয়াশলাই। এটি একটি স্মল সাইজ বা পকেট সাইজ বই। মুলত শিশু কিশোরদের জন্য এই বইটি। তবে যেকোন বয়সের পাঠকদের কাছে বইটি ভালো লাগবে আশা করি। এ বইটি প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য, দিয়াশলাই সংগ্রহের মত সুন্দর একটি বিষয়কে সবার সামনে তুলে ধরা। শিশু কিশোরদের ভালো কাজ তথা কোন না কোন সংগ্রহে উদ্বুদ্ধ করা। কারণ শখ ও সংগ্রহ আমাদের আনন্দের পাশাপাশি শিক্ষিতও করে তোলে। জন ওয়াকারের জীবন ও আবিষ্কার এ বইটিতে সচিত্র ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রকাশিত হবে ২৯ মে ২০২৩ আপনারা চাইলে সংগ্রহে রাখতে পারেন । ধন্যবাদ।