একটি কাগজের গল্প
বিছানায় বালিশ চেপে
উপর হয়ে লিখছো
কবিতা নাকি সুখ দুঃখের পঙক্তি মালা।
গল্প তো তুমি লেখো না
অথচ আমার সব গল্পের নায়িকা
তুমিই হয়ে আছো অনন্তকাল ধরে।
ঠোঁটে বাকা হাসি নিয়ে ভাবছো
আবার লিখছো।
আবার ভাবছো
একাই হাসছো
আবার লিখছো।
এরপর
লেখা কাগজটি এক সময়
দুমড়ে মুচড়ে গোল করে
মেঝেতে ফেলে দিলে।
যেভাবে জীবন থেকে কাউকে
ঝেড়ে ফেলা হয়।
খুব সহজেই।
হাসতে হাসতে যেভাবে চীনে বাদামের খোসা ফেলা হয়।
ঠিক সেভাবেই।
এরপর একটি
গভীর ঘুম হলো তোমার!
অনেকটা স্লিপিং উইথয়াউট ড্রিম।
তুমি অবশ্য বলেছিলে,
আমি তোমার স্বপ্নে এসেছিলাম মোট দু'বার।
কেন এসেছিলাম বা কি দেখেছিলে
কোনদিন তা বলোনি।
ঠিক কোন প্রহরে স্বপ্ন গুলো দেখেছিলে তাও বলোনি।
শুনেছি, কোন এক প্রহরের
স্বপ্ন নাকি সত্য হয়।
আমার জীবনের সকল সত্য এখন
পলাতক।
কোন এক অজানা কারণে আমার সত্যের উপর হুলিয়া জারি হয়েছে।
বাড়ির মেয়েটি তোমার ঘরের মেঝে
পরিপাটি করেই ঝাড়ু দিল।
তার পায়ে দলিত হলো
গতরাতে তোমার লেখা
দুমড়ে মুচড়ে গোল করে
ফেলে দেয়া কাগজটি।
ধুলোবালি আর অন্যান্য ময়লার
সাথে গোল করা কাগজটির জায়গা হলো
কিচেনের ডাস্টবিনে।
গতরাতে ডিনারে তোমরা যে-
বিফ রেজালা, রুই মাছ, ডাল, ভাত আর সবজি খেয়েছিলে তাদের এঁটো গুলোর সাথে
মিলেমিশে অদ্ভুত এক রঙ ধারণ করেছে
কাগজটি।
বেলা বারোটা নাগাদ
বাশী বেজে উঠলো।
নাহ! আমার মন যমুনার বাশী নয়।
ময়লা ওয়ালা ! ময়লা নিতে এসেছে।
এ শহরের ময়লা ওয়ালাদের অনেক ক্ষমতা।
এরা মোটেও শৈল্পিক নয়।
ময়লা দিয়ে লেজেগোবরে একাকার করে ফেলে।
এরা চাইলে বিরল এক গন্ধে
আমাদের চলমান জীবন স্থির করে দিতে পারে।
মেয়েটি ময়লার পুটলিটি রেখে দিল
বহুতল ভবনের প্রধান ফটকের বাইরে।
কেউ একজন এসে পুটলিটি সংগ্রহ করে নেবে।
যার মুখে, অনবরত বিকট বাশী বাজবে।
একজন এলো এবং ময়লার পুটলিটাও তুলে নিল।
কিন্তু তার অগোচরে গতরাতের
দুমড়ে মুচড়ে গোল হওয়া
দলিত ব্যাথিত মাল্টিকালার কাগজটি
পুটলি থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে রইলো।
নাগরিক ব্যস্ততার শহরে
নিঃসঙ্গ আহত একটি কাগজ।
প্রচন্ড খরতাপে
বেলা তিনটা নাগাদ নিঃসঙ্গ কাগজটি
শুকনো ফসিল হয়ে গেল।
বিড়ির নিতম্বে সুখ টান দিয়ে
কেউ একজন
কাগজটি তুলে বস্তায় ভরে দিল!
ঠিক দুদিন পর
আরও অনেক ব্যাথিত কাগজের সাথে
কাগজটি সের দরে বিক্রি হয়ে গেল।
একদিন দুমড়ে মুচড়ে গোল হয়ে যাওয়া কাগজটি
নিজেকে আবিষ্কার করলো
অচেনা কোথাও,
ভীষণ অচেনা কোথাও!
তার নিজেকে মিনস মিট মনে হচ্ছিল।
ভাবতে ভাবতেই সে
কাগজের মন্ডতে পরিনত হলো।
তার মৃত্যু হলো।
এর কিছু দিন পর
তুমি আড়ং থেকে বেশ এক্সপেন্সিভ একটি
ফুলদানি কিনে আনলে।
বেশ আনকমনও বটে!
কাগজের মন্ড থেকে তৈরি ফুলদানি।
এগুলোই নাকি এখন ট্রেন্ডি!
৬ জুলাই ২০২৩
No comments:
Post a Comment